
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা এখন এক নামেই আতঙ্কিত—বিপ্লব লাহারি।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বিপ্লব লাহারির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, বালু মহল দখল, মাদক সেবন ও বিক্রিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয় সিদ্ধান্ত ও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে তিনি এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন।
৫ আগস্টের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠায় তিনি এখন পৌরবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানের ওপর হামলার অভিযোগ
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সামনে লিটন কমিশনারের চায়ের দোকানে
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. মজিবুর রহমানের ছেলে মো. মেহেদী হাসান শোভনকে ডেকে নেন বিপ্লব লাহারি।
তিনি শোভনের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তার বাবাকে “রাজাকার” বলে অপমান করেন।
শোভন প্রতিবাদ করলে বিপ্লব তাকে মারধরের জন্য এগিয়ে আসেন, তবে স্থানীয়দের বাধায় হাতাহাতি এড়ানো যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থলেই বিপ্লব হুমকি দেন—
“তোকে সন্ধ্যার পরে মারমু, তোকে পুলিশে ধরাইয়া দিমু।”
এ ঘটনায় শোভন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে ৩ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় জিডি (নম্বর-১০৪) করেন।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি অসম্মান
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শোভনের বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তিনি ছিলেন বীর প্রতীক মরহুম সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার করম আলীর ছোট ভাই।
এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে অপমান করায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা দেখা দিয়েছে।
চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবিরের জমি সংক্রান্ত বিরোধের সুযোগ নিয়ে বিপ্লব লাহারি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান,
“বিপ্লব লাহারি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেন না। তার অত্যাচারে পৌরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।”
দলের অবস্থান ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন তালুকদার বলেন,
“তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আমরা শুনেছি। তাকে সংশোধনের জন্য বহুবার বলা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় বিএনপি নেবে না।”
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান,
“তার শ্বশুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং শালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি।
এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে লিয়াজো করে বালু মহল দখলসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন।”
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন,
“তার বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”