
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ছত্রছায়ায় সরকারি গুদামে ঢুকছে নিম্নমানের, দুর্গন্ধযুক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী চাল। এই চাল বিতরণ করা হচ্ছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চলছে কোটি টাকার লুটপাট— যার পরিমাণ অর্ধশত কোটিরও বেশি।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কয়েকটি অটো রাইস মিল নিম্নমানের সিদ্ধ চাল সরবরাহ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বরং সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দিয়ে গোপনে চাল সরানোর ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি নিম্নমানের পচা চাল কেনার অভিযোগে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার খাদ্যগুদাম ঘুরে দেখা গেছে— বস্তাভর্তি চালের মধ্যে খুদ, অর্ধসিদ্ধ দানা, বিবর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত চালের মিশ্রণ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত আর্দ্রতা ১৪% থাকার কথা থাকলেও পরীক্ষায় পাওয়া গেছে মাত্র ১৩.৮%।
অভিযোগ রয়েছে, গুদাম কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করছেন। কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া চাল সরবরাহের তথ্যও পাওয়া গেছে। মোহনপুরের ব্যবসায়ী আতাউর রহমান স্বীকার করেছেন, নিজস্ব লাইসেন্স না থাকলেও অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪২০ মেট্রিক টন ধান নিয়ে চাল সরবরাহ করেছেন। অন্যদিকে যেসব মিলের নামে সরবরাহ দেখানো হয়েছে— মাহফুজুর রহমান রাইস মিল, নূরজাহান চালকল ও মোল্লা চালকল— তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রাথমিক তদন্তে নিম্নমানের চালের প্রমাণ পেয়েছেন। গোদাগাড়ী, বাগমারা ও দুর্গাপুরে পচা চাল বদলে ফেলার ঘটনা ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খাদ্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, ধান না কিনেই সরাসরি চাল সংগ্রহ করে পরিবহন ব্যয়সহ অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের ভাষায়—
“খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল দরিদ্র মানুষের অধিকার। এ চাল নিয়ে অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়।”
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক জানান, “বিষয়টি তদন্তাধীন, তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) মাইন উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের ভেতরের সূত্রগুলো বলছে, জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই মিলার ও গুদাম কর্মকর্তারা এই দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজশাহীর খাদ্য অধিদপ্তরে এ ধরনের অনিয়ম নতুন নয়। দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক উদাসীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন—
“যারা দরিদ্র মানুষের পেটের চাল লুটে খায়, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”