যোতশিবরামপুর (কলকাতা) প্রতিনিধি :: সমরেশ রায় ও শম্পা দাস

যোতশিবরামপুরের হালদার পাড়ার শক্তি সংঘ আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী শ্যামা পুজো এ বছর ৬৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে হালদার পরিবার এই পুজো আয়োজন করে আসছে তাদের নিজস্ব সাবেক রীতি-নীতিতে। এ বছরও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে, সাদামাটা অথচ মনোমুগ্ধকর প্রতিমা ও পরিবেশের জন্য এই পুজো অর্জন করেছে ‘সেরা প্রতিমার শিরোপা ২০২৫’।

এই পুজোর সাথে যুক্ত রয়েছেন হালদার পরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যাঁরা ৬৫ বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন, তাঁদের স্মরণে আজও পরিবার ও ক্লাবের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুজোর সূচনা হয় কয়েকটি পরিবারের উদ্যোগে, যা আজ এক বৃহৎ মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে শক্তি সংঘের সভাপতি বিলাস হালদার, কার্যকরী সভাপতি সঞ্জিত হালদার, সহ-সভাপতি দেবনাথ হালদার, সমীর হালদার, বিল্লদল হালদার ও অজিত হালদার; যুগ্ম সম্পাদক প্রিয়াংশু আদক ও শোভন হালদার; যুগ্ম সহ-সম্পাদক শান্তনু দাস ও অতনু আদক; কোষাধ্যক্ষ শীতাংশু হালদার ও দীপ হালদার। এছাড়াও হিসাব পরীক্ষক সুদীপ হালদার, হিসাব রক্ষক স্বপন হালদার এবং হালদার পরিবারের মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পুজোর দিনগুলোতে গোটা হালদারপাড়া উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে। ভোর থেকেই পরিবারের সদস্যরা নিজেদের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পাড়াজুড়ে বেজে ওঠে শ্যামা সংগীত, আলোয় সেজে ওঠে প্যান্ডেল। থিম পুজোর ঝলক না থাকলেও প্রতিমার ঐতিহ্যবাহী রূপ ও সাবেকী আবহ সবার মন জয় করে নেয়।

ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা এখনও জুনিয়রদের পাশে থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, যাতে আগামী প্রজন্ম এই পুজোর ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে। সদস্যদের বক্তব্য— “আমাদের পুজোয় হয়তো থিম নেই, চাকচিক্য নেই, কিন্তু আছে ঐতিহ্য, ভক্তি ও পারিবারিক একতা।”

হালদার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ৭০ তম বর্ষে তাঁরা আরও বৃহৎ পরিসরে এই পুজো আয়োজন করতে চান। তাঁদের ভাষায়— “আমাদের প্রতিমা সাবেক রীতিতেই তৈরি হয়। এটাই আমাদের গর্ব। অতীতে সারিবদ্ধভাবে মানুষ ভোগ খেতে আসতেন, আবার সেই দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”

এ বছর হালদার পাড়ার শক্তি সংঘের প্রতিমা শুধু এলাকাবাসীর মনই জয় করেনি, স্থানীয় পরিবেশ চ্যানেলের পক্ষ থেকেও ‘সেরা প্রতিমা ও সেরা পরিবেশের সম্মান’ অর্জন করেছে।

চ্যানেলের বিচারকমণ্ডলীর তরফে জানানো হয়েছে, “হালদার পরিবারের নিষ্ঠা, পুজো আয়োজনের ধারাবাহিকতা ও পরিবেশের সামঞ্জস্যই এই সম্মান প্রাপ্য করে তুলেছে।”

পুজোর এই আনন্দঘন মুহূর্তে হালদার পরিবারের প্রত্যেক সদস্য ও এলাকাবাসী উচ্ছ্বাসে ভাসছেন, আশাবাদী আগামী বছর আরও বড় করে এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরবেন।