
বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নিকটবর্তী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের কেশবচর গ্রামে নতুন একটি মসজিদ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দুই ধর্মীয় মতাদর্শের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সময় আহলে হাদিস মতাদর্শে বিশ্বাসী কয়েকজন স্থানীয় এবং সুন্নি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হঠাৎ তৈরি হওয়া উত্তেজনার কারণে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হলে প্রশাসনের নির্দেশে দ্রুত সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেশবচর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জবরুল মিয়ার অর্থায়নে নতুন এই মসজিদের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই দুই ধর্মীয় মতাদর্শের মধ্যে মতপার্থক্য দৃশ্যমান হতে থাকে। বিশেষ করে মসজিদের নাম নির্ধারণ, ইমাম নিয়োগ এবং ধর্মীয় রীতি পালনের ধরন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব থেকেই অঘোষিত বিভাজন ছিল। আহলে হাদিস এবং সুন্নি মতাদর্শের অনুসারীরা পৃথক দৃষ্টিভঙ্গিতে ধর্মীয় আচরণ পরিচালনার দাবি করায় এলাকায় ধারাবাহিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
গ্রামের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, নতুন মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্তই এ বিরোধের মূল সূত্র। দীর্ঘ সময় ধরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় কার্যক্রম চললেও দুই মতবাদের পৃথক অবস্থান, ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং মাসিক বা সাপ্তাহিক আমল পালন নিয়ে দুই দলের মধ্যে বারবার বিতর্ক দেখা দেয়। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা হলেও মতবিরোধের সমাধান হয়নি।
ঘটনার দিন উদ্বোধনী আয়োজন শুরু হলে দুই পক্ষের অনুসারীরা তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক পরিবার আতঙ্কে বাড়িতে অবস্থান নেয় এবং গ্রামজুড়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বড় ধরনের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ উভয় পক্ষের সাথে আলাপ করে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে নির্দেশনা দেয়।
গ্রামের অনেকেই মনে করেন, ধর্মীয় রীতিনীতির পার্থক্য এবং পৃথক জামায়াত পরিচালনার বিষয়টি দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস তৈরি করেছে। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ আলাদা পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব আরো গভীর হয়েছে। গ্রামবাসীর মতে, ধর্মীয় মতবিরোধ যেকোনো মুহূর্তে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে স্থানীয় প্রশাসনকে সবসময় সজাগ থাকতে হয়েছে।
ঘটনার পর মৌলভীবাজার মডেল থানার নিয়ন্ত্রণাধীন শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রশাসন এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে কোনো গুজব বা উসকানিমূলক বক্তব্যে কান না দিতে সতর্ক করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে নেওয়ার যেকোনো চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং নিয়মিত টহল চালিয়ে যাচ্ছে।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেশবচরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। গ্রামবাসী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চাইছে, তবে ধর্মীয় মতাদর্শগত বিভাজন দূর না হওয়া পর্যন্ত বিরোধের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের নেতাদের সাথে আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।