নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

মাজহারুল ইসলাম বাদল, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া):
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ও পৌর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে খুন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধারাবাহিক অপরাধের পরও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

পুলিশের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

গত ২৯ সেপ্টেম্বর নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে মিথ্যা চুরির অভিযোগে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চার দিন ধরে নির্যাতনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে ফাঁড়িটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুনরায় চালু করা হয়।

বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

গত ১৭ অক্টোবর রাতে উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে উমর হাসান (২৪) নামে এক তরুণকে তাঁর বন্ধু খাইরুল আমিন (২৫) জবাই করে হত্যা করে। পরদিন খাইরুল থানায় গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে।

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি

১৪ অক্টোবর রাতে নবীনগর পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবাসী শরিফ মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে নগদ সাত লাখ টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একজনকে আটক ও কিছু টাকা উদ্ধার করলেও মূল হোতারা এখনো পলাতক রয়েছে।

নিখোঁজের পর কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার

গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার লাউর গ্রামে নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ফারজানা আক্তার জুঁই নামে এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

২১ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌর এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও ১০ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। মূল হোতারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চুরি ও ছিনতাই বেড়েছে

গত দুই মাসে নবীনগর পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে একাধিক মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মোবাইল ফোন এমনকি মসজিদের মাইক পর্যন্ত চুরি হয়েছে। বাজার, সড়ক ও আবাসিক এলাকায়ও চুরি-ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে।

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের মতে, নবীনগরে সাম্প্রতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। থানার বর্তমান ওসির দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, অভিজ্ঞ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নতুনভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন।

পুলিশের ব্যাখ্যা

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যান্য মামলাগুলো তদন্তাধীন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও স্থানীয়দের মধ্যে অস্বস্তি কাটেনি।

সচেতন মহলের মতামত

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় নবীনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

অক্টোবর ১৯, ২০২৫

মাজহারুল ইসলাম বাদল, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া):
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ও পৌর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে খুন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধারাবাহিক অপরাধের পরও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

পুলিশের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

গত ২৯ সেপ্টেম্বর নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে মিথ্যা চুরির অভিযোগে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চার দিন ধরে নির্যাতনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে ফাঁড়িটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুনরায় চালু করা হয়।

বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

গত ১৭ অক্টোবর রাতে উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে উমর হাসান (২৪) নামে এক তরুণকে তাঁর বন্ধু খাইরুল আমিন (২৫) জবাই করে হত্যা করে। পরদিন খাইরুল থানায় গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে।

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি

১৪ অক্টোবর রাতে নবীনগর পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবাসী শরিফ মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে নগদ সাত লাখ টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একজনকে আটক ও কিছু টাকা উদ্ধার করলেও মূল হোতারা এখনো পলাতক রয়েছে।

নিখোঁজের পর কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার

গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার লাউর গ্রামে নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ফারজানা আক্তার জুঁই নামে এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

২১ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌর এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও ১০ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। মূল হোতারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চুরি ও ছিনতাই বেড়েছে

গত দুই মাসে নবীনগর পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে একাধিক মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মোবাইল ফোন এমনকি মসজিদের মাইক পর্যন্ত চুরি হয়েছে। বাজার, সড়ক ও আবাসিক এলাকায়ও চুরি-ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে।

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের মতে, নবীনগরে সাম্প্রতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। থানার বর্তমান ওসির দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, অভিজ্ঞ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নতুনভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন।

পুলিশের ব্যাখ্যা

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যান্য মামলাগুলো তদন্তাধীন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও স্থানীয়দের মধ্যে অস্বস্তি কাটেনি।

সচেতন মহলের মতামত

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় নবীনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।