কাগুজে কাজে উধাও রেলের কোটি কোটি টাকাঅডিটে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের ইঙ্গিত

রাকিব উদ্দিন, চট্টগ্রামঃ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ ও লাইন সংস্কারের নামে ব্যয় হওয়া কোটি কোটি টাকার কোনো কাজ মাঠপর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি অডিটে উঠে এসেছে কাজ না করেও বিল ছাড়, ডুপ্লিকেট বিল, প্রকল্প নথিতে অস্পষ্টতা এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের আধিপত্যের মতো চাঞ্চল্যকর অনিয়ম। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন নয়; বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের দায়িত্বকালীন সময়ে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে কাগজে-কলমে কাজ দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো কার্যক্রমই পরিচালিত হয়নি। ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ, স্লিপার প্রতিস্থাপন, সুইচ এক্সপ্যানশন জয়েন্ট বসানো এবং ট্র্যাক রিনিউয়ালের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিপুল অংকের ব্যয় দেখানো হলেও এসব কাজের উপস্থিতি মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষ একটি প্রকল্পে ২৮ সেট সুইচ এক্সপ্যানশন জয়েন্ট বসানোর কথা থাকলেও একটি সেটও পাওয়া যায়নি। আরেক প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও শ্রমিক, উপকরণ কিংবা মালামাল সরবরাহের কোনো নথি মেলেনি।

অডিটে জানা যায়, কয়েকটি প্রকল্পে একই ধরনের কাজ বিভিন্ন নামে দেখিয়ে একাধিকবার বিল তোলা হয়েছে। এমনকি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে কাজ না করেই পূর্ণ বিল পরিশোধের ঘটনা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা থাকলেও কার্যত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই একের পর এক চুক্তি পেয়েছে। ন্যায্য প্রতিযোগিতা থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকত না বলে মন্তব্য করেছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকার ট্র্যাক সাপ্লাই অফিসার/পূর্ব এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী–১, পাহাড়তলী কার্যালয়ের আওতায় ২০১৯–২০ ও ২০২০–২১ অর্থবছরের কয়েকটি বড় প্রকল্পে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিল পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। কোনো কাজের প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এনএবি–আল জয়েন্ট ভেঞ্চারের নামে প্রায় তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ট্রেড লিংক সলিউশনের নামে আরেক প্রকল্পে বিল দেওয়া হলেও রেল, স্লিপার বা সংশ্লিষ্ট মালামালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিরীক্ষায় আরও দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেল লাইন তছরুপ হয়েছে, যার কোনো হিসাব রেলওয়ের রেকর্ডে নেই।

অডিট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রকল্পে আপত্তিকৃত অর্থের পরিমাণ অন্তত তিন কোটি ঊনসত্তর লাখ টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকল্প যুক্ত করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং সেটি শতকোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারে। তাদের মতে, সরকারি অর্থের এমন অপচয় শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়; রেলযাত্রার নিরাপত্তার জন্যও এটি সরাসরি হুমকি।

অডিট প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে মালামাল গ্রহণ ও ইস্যুর মূল নথিপত্র সংযুক্ত না থাকলে দায়ী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে হবে। রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোড অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছিল কাজের গুণগতমান এবং অর্থ ব্যবহারের প্রমাণ নিশ্চিত করা, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত হয়নি।বাকেরগঞ্জে গণছুটিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

কাগুজে কাজে উধাও রেলের কোটি কোটি টাকাঅডিটে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের ইঙ্গিত

নভেম্বর ৭, ২০২৫

রাকিব উদ্দিন, চট্টগ্রামঃ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ ও লাইন সংস্কারের নামে ব্যয় হওয়া কোটি কোটি টাকার কোনো কাজ মাঠপর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি অডিটে উঠে এসেছে কাজ না করেও বিল ছাড়, ডুপ্লিকেট বিল, প্রকল্প নথিতে অস্পষ্টতা এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের আধিপত্যের মতো চাঞ্চল্যকর অনিয়ম। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন নয়; বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের দায়িত্বকালীন সময়ে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে কাগজে-কলমে কাজ দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো কার্যক্রমই পরিচালিত হয়নি। ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ, স্লিপার প্রতিস্থাপন, সুইচ এক্সপ্যানশন জয়েন্ট বসানো এবং ট্র্যাক রিনিউয়ালের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিপুল অংকের ব্যয় দেখানো হলেও এসব কাজের উপস্থিতি মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষ একটি প্রকল্পে ২৮ সেট সুইচ এক্সপ্যানশন জয়েন্ট বসানোর কথা থাকলেও একটি সেটও পাওয়া যায়নি। আরেক প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও শ্রমিক, উপকরণ কিংবা মালামাল সরবরাহের কোনো নথি মেলেনি।

অডিটে জানা যায়, কয়েকটি প্রকল্পে একই ধরনের কাজ বিভিন্ন নামে দেখিয়ে একাধিকবার বিল তোলা হয়েছে। এমনকি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে কাজ না করেই পূর্ণ বিল পরিশোধের ঘটনা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা থাকলেও কার্যত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই একের পর এক চুক্তি পেয়েছে। ন্যায্য প্রতিযোগিতা থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকত না বলে মন্তব্য করেছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকার ট্র্যাক সাপ্লাই অফিসার/পূর্ব এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী–১, পাহাড়তলী কার্যালয়ের আওতায় ২০১৯–২০ ও ২০২০–২১ অর্থবছরের কয়েকটি বড় প্রকল্পে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিল পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। কোনো কাজের প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এনএবি–আল জয়েন্ট ভেঞ্চারের নামে প্রায় তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ট্রেড লিংক সলিউশনের নামে আরেক প্রকল্পে বিল দেওয়া হলেও রেল, স্লিপার বা সংশ্লিষ্ট মালামালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিরীক্ষায় আরও দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেল লাইন তছরুপ হয়েছে, যার কোনো হিসাব রেলওয়ের রেকর্ডে নেই।

অডিট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রকল্পে আপত্তিকৃত অর্থের পরিমাণ অন্তত তিন কোটি ঊনসত্তর লাখ টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকল্প যুক্ত করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং সেটি শতকোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারে। তাদের মতে, সরকারি অর্থের এমন অপচয় শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়; রেলযাত্রার নিরাপত্তার জন্যও এটি সরাসরি হুমকি।

অডিট প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে মালামাল গ্রহণ ও ইস্যুর মূল নথিপত্র সংযুক্ত না থাকলে দায়ী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে হবে। রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোড অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছিল কাজের গুণগতমান এবং অর্থ ব্যবহারের প্রমাণ নিশ্চিত করা, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত হয়নি।বাকেরগঞ্জে গণছুটিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা