সিডর দিবস: ১৮ বছর পরও শরণখোলায় ভাঙন আর আতঙ্কের ছায়া

এনায়েত করিম রাজিব
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাত উপকূলজুড়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছিল, তার স্মৃতি এখনও গভীরভাবে আঁচড় কেটে আছে বাগেরহাটের শরণখোলায়। সেদিনের প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, গবাদিপশু ও বিশাল জনপদ। শত শত মানুষের প্রাণহানি আর স্বজনহারা পরিবারের কান্না আজও এখানকার মানুষকে তাড়া করে ফেরে। বিশেষ করে শরণখোলা ও সাউথখালী যেন সেই রাতের আতঙ্ক থেকে এখনো পুরোপুরি বের হতে পারেনি।

সিডরের পর উপকূলীয় মানুষের স্থায়ী সুরক্ষার জন্য বহুদিন ধরেই টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি ছিল স্থানীয়দের। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৫/১ পোল্ডারে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএইচডব্লিউআই ২০১৬ সালে কাজ শুরু করলেও প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগে প্রায় সাত বছর। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঁধটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, হস্তান্তরের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের মধ্যবর্তী প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে এবং কোথাও কোথাও মূল বাঁধ পর্যন্ত ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীশাসন ছাড়াই বাঁধ নির্মাণ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ত্রুটির কারণে এত দ্রুত ভাঙন শুরু হয়েছে।

আরোও পড়ুন – বাগেরহাটে দীঘিতে ভাসমান রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

স্থানীয় বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, আলমগীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর খান জানান, সিডরের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের পর তারা টেকসই বাঁধের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু নতুন বাঁধটি উচ্চতা বাড়ানো হলেও স্থায়িত্ব পায়নি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ভাঙন শুরু হওয়ায় আবারও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

শরণখোলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীশাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ নির্মাণ অসম্ভব। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও পরিকল্পনার অভাব ছিল বলেই আজ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে দুর্নীতির তদন্ত ও জরুরি নদীশাসনের দাবি জানান।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশে জিও ব্যাগ ফেলা ও সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। বগী ও ফাশিয়াতলা এলাকায় প্রাথমিক ভাঙনরোধ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে কিছুটা হলেও ঝুঁকি কমবে।

১৮ বছর আগের সিডরের ভয়াবহতা আজও ভুলতে পারেনি মানুষ। আর নতুন বাঁধের ভাঙন সেই আতঙ্ককে আবারও জাগিয়ে তুলছে উপকূলবাসীর মনে।

সিডর দিবস: ১৮ বছর পরও শরণখোলায় ভাঙন আর আতঙ্কের ছায়া

নভেম্বর ১৫, ২০২৫

এনায়েত করিম রাজিব
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাত উপকূলজুড়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছিল, তার স্মৃতি এখনও গভীরভাবে আঁচড় কেটে আছে বাগেরহাটের শরণখোলায়। সেদিনের প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, গবাদিপশু ও বিশাল জনপদ। শত শত মানুষের প্রাণহানি আর স্বজনহারা পরিবারের কান্না আজও এখানকার মানুষকে তাড়া করে ফেরে। বিশেষ করে শরণখোলা ও সাউথখালী যেন সেই রাতের আতঙ্ক থেকে এখনো পুরোপুরি বের হতে পারেনি।

সিডরের পর উপকূলীয় মানুষের স্থায়ী সুরক্ষার জন্য বহুদিন ধরেই টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি ছিল স্থানীয়দের। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৫/১ পোল্ডারে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএইচডব্লিউআই ২০১৬ সালে কাজ শুরু করলেও প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগে প্রায় সাত বছর। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঁধটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, হস্তান্তরের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের মধ্যবর্তী প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে এবং কোথাও কোথাও মূল বাঁধ পর্যন্ত ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীশাসন ছাড়াই বাঁধ নির্মাণ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ত্রুটির কারণে এত দ্রুত ভাঙন শুরু হয়েছে।

আরোও পড়ুন – বাগেরহাটে দীঘিতে ভাসমান রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার

স্থানীয় বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, আলমগীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর খান জানান, সিডরের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের পর তারা টেকসই বাঁধের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু নতুন বাঁধটি উচ্চতা বাড়ানো হলেও স্থায়িত্ব পায়নি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ভাঙন শুরু হওয়ায় আবারও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

শরণখোলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীশাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ নির্মাণ অসম্ভব। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও পরিকল্পনার অভাব ছিল বলেই আজ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে দুর্নীতির তদন্ত ও জরুরি নদীশাসনের দাবি জানান।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশে জিও ব্যাগ ফেলা ও সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। বগী ও ফাশিয়াতলা এলাকায় প্রাথমিক ভাঙনরোধ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে কিছুটা হলেও ঝুঁকি কমবে।

১৮ বছর আগের সিডরের ভয়াবহতা আজও ভুলতে পারেনি মানুষ। আর নতুন বাঁধের ভাঙন সেই আতঙ্ককে আবারও জাগিয়ে তুলছে উপকূলবাসীর মনে।