মান্দার মৈনম গ্রামের আড়াইশ বছরের রায় বাড়ি: ইতিহাস, গৌরব ও বেদনার জীবন্ত সাক্ষ্য

মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
বাংলার গ্রামীণ অজপাড়াগাঁয় লুকিয়ে আছে বহু অজানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত মৈনম গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী রায় বাড়ি। দোতলা মাটির তৈরি এই রাজবাড়িটি আজও বহন করে চলেছে জমিদার প্রথার স্মৃতি, শৈল্পিক স্থাপত্যের মহিমা ও বেদনাদায়ক ইতিহাসের সাক্ষ্য।

চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত স্থাপনাটির খিলান, কারুকাজ আর জানালার নকশা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। একসময় এই রাজবাড়ি রাতের আঁধারেও আলোকসজ্জায় ঝলমল করত। জমিদারি শৌর্য-বীর্য আর সামাজিক অবস্থানকে ধারণ করে এই বাড়ি এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াইশ বছর আগে জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের পিতা পাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয় করেন। সেখান থেকেই রায় পরিবারের জমিদারি বিস্তৃত হয় আত্রাই ছাড়িয়ে নাটোর ও দিনাজপুর পর্যন্ত। রায় পরিবার শুধু জমিদারি নয়, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ছিল অগ্রগামী। দুর্গাপূজার সময় কলকাতা ও ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের এনে যাত্রাপালা ও নাটকের আয়োজন করতেন তাঁরা, যা স্থানীয় সমাজে সৃষ্টি করেছিল নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণ।

তবে রায় বাড়ির ইতিহাসে বেদনার অধ্যায়ও রয়েছে। ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রায় পরিবারের ১৩ জন সদস্য নির্মমভাবে নিহত হন। বেঁচে যান বড়দা প্রসাদ রায়, যিনি পরবর্তীতে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পরিবারের সদস্যরা একে একে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। সর্বশেষ বুরন রায় ও বাবন রায় এখানে বসবাস করলেও জমিদার পরিবারের সেই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।

বর্তমানে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন এস এম ব্রুহানী সুলতান গামা। তাঁর পরিবারের উদ্যোগে সংস্কারের পর এটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে রায় বাড়ি এখন মান্দার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

নিস্তব্ধ গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটি দর্শনার্থীদের কানে যেন নীরবে ফিসফিসিয়ে বলে— “আমি আড়াইশ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী।” ইতিহাস, গৌরব, সংস্কৃতি ও বেদনার অনন্য সমন্বয়ে রায় বাড়ি হয়ে উঠেছে মান্দা ও নওগাঁ জেলার পর্যটন মানচিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

মান্দার মৈনম গ্রামের আড়াইশ বছরের রায় বাড়ি: ইতিহাস, গৌরব ও বেদনার জীবন্ত সাক্ষ্য

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫

মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
বাংলার গ্রামীণ অজপাড়াগাঁয় লুকিয়ে আছে বহু অজানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত মৈনম গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী রায় বাড়ি। দোতলা মাটির তৈরি এই রাজবাড়িটি আজও বহন করে চলেছে জমিদার প্রথার স্মৃতি, শৈল্পিক স্থাপত্যের মহিমা ও বেদনাদায়ক ইতিহাসের সাক্ষ্য।

চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত স্থাপনাটির খিলান, কারুকাজ আর জানালার নকশা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। একসময় এই রাজবাড়ি রাতের আঁধারেও আলোকসজ্জায় ঝলমল করত। জমিদারি শৌর্য-বীর্য আর সামাজিক অবস্থানকে ধারণ করে এই বাড়ি এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াইশ বছর আগে জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের পিতা পাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয় করেন। সেখান থেকেই রায় পরিবারের জমিদারি বিস্তৃত হয় আত্রাই ছাড়িয়ে নাটোর ও দিনাজপুর পর্যন্ত। রায় পরিবার শুধু জমিদারি নয়, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ছিল অগ্রগামী। দুর্গাপূজার সময় কলকাতা ও ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের এনে যাত্রাপালা ও নাটকের আয়োজন করতেন তাঁরা, যা স্থানীয় সমাজে সৃষ্টি করেছিল নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণ।

তবে রায় বাড়ির ইতিহাসে বেদনার অধ্যায়ও রয়েছে। ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রায় পরিবারের ১৩ জন সদস্য নির্মমভাবে নিহত হন। বেঁচে যান বড়দা প্রসাদ রায়, যিনি পরবর্তীতে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পরিবারের সদস্যরা একে একে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। সর্বশেষ বুরন রায় ও বাবন রায় এখানে বসবাস করলেও জমিদার পরিবারের সেই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।

বর্তমানে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন এস এম ব্রুহানী সুলতান গামা। তাঁর পরিবারের উদ্যোগে সংস্কারের পর এটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে রায় বাড়ি এখন মান্দার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

নিস্তব্ধ গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটি দর্শনার্থীদের কানে যেন নীরবে ফিসফিসিয়ে বলে— “আমি আড়াইশ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী।” ইতিহাস, গৌরব, সংস্কৃতি ও বেদনার অনন্য সমন্বয়ে রায় বাড়ি হয়ে উঠেছে মান্দা ও নওগাঁ জেলার পর্যটন মানচিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।