মোংলা বন্দরের ৭৫তম বর্ষপূর্তি: আধুনিকায়ন, নাব্যতা ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে নতুন মাইলফলক

এনায়েত করিম রাজিব
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দর তার গৌরবময় ৭৫ বছরের পথচলার স্মরণে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপনে সোমবার বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মধ্যরাতে ঠিক ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে নোঙ্গর করা দেশি-বিদেশি সব জাহাজে একযোগে হুইস্‌ল বাজানোর মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণে সদর দপ্তর থেকে জেটি পর্যন্ত র‌্যালি বের হয়। রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে উদযাপনের উদ্বোধন করেন।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মদক্ষতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বন্দর পরিচালনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয়, যারা সর্বোচ্চ পণ্য হ্যান্ডলিং, জাহাজ মুভমেন্ট, কন্টেইনার আনয়ন বা সেবা প্রদান করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত এক বছরে পিআরএল নেওয়া ৫৬ জন কর্মীকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।

মোংলা বন্দর ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর ‘চালনা পোর্ট’ নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের আইন অনুযায়ী এটি মোংলা পোর্ট অথরিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সাম্প্রতিক অর্থবছরে বন্দরটির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হয়েছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। বছরের শেষে বন্দরে ১ কোটি টনের বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ শতাংশেরও বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্য ছাড়িয়ে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউস্‌ মুভমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। রাজস্ব আয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৪৩ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, যা লক্ষ্য থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি। নিট মুনাফায় বন্দর নতুন রেকর্ড গড়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০৩ শতাংশ বেশি অর্জন করে।

আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের ফলে বন্দর এখন প্রতি ঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। জেটির নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কারণে একই সময়ে পাঁচটি জাহাজে অপারেশন পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে। চলমান অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসেছে ৩৫৬টি জাহাজ, আমদানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন পণ্য এবং ৪ হাজারের বেশি গাড়ি।

এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ‘পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি’ স্থাপিত হয়েছে, যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। বন্দর ব্যবহার করে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের সাথে নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ আরও দ্রুততর এবং সহজ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে মোংলা বন্দর আন্তর্জাতিক মানের সেবার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

মোংলা বন্দরের ৭৫তম বর্ষপূর্তি: আধুনিকায়ন, নাব্যতা ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে নতুন মাইলফলক

ডিসেম্বর ১, ২০২৫

এনায়েত করিম রাজিব
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দর তার গৌরবময় ৭৫ বছরের পথচলার স্মরণে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপনে সোমবার বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মধ্যরাতে ঠিক ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে নোঙ্গর করা দেশি-বিদেশি সব জাহাজে একযোগে হুইস্‌ল বাজানোর মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণে সদর দপ্তর থেকে জেটি পর্যন্ত র‌্যালি বের হয়। রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে উদযাপনের উদ্বোধন করেন।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মদক্ষতা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বন্দর পরিচালনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয়, যারা সর্বোচ্চ পণ্য হ্যান্ডলিং, জাহাজ মুভমেন্ট, কন্টেইনার আনয়ন বা সেবা প্রদান করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত এক বছরে পিআরএল নেওয়া ৫৬ জন কর্মীকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।

মোংলা বন্দর ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর ‘চালনা পোর্ট’ নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের আইন অনুযায়ী এটি মোংলা পোর্ট অথরিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সাম্প্রতিক অর্থবছরে বন্দরটির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হয়েছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। বছরের শেষে বন্দরে ১ কোটি টনের বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ শতাংশেরও বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্য ছাড়িয়ে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউস্‌ মুভমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। রাজস্ব আয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৪৩ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, যা লক্ষ্য থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি। নিট মুনাফায় বন্দর নতুন রেকর্ড গড়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০৩ শতাংশ বেশি অর্জন করে।

আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের ফলে বন্দর এখন প্রতি ঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। জেটির নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কারণে একই সময়ে পাঁচটি জাহাজে অপারেশন পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে। চলমান অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসেছে ৩৫৬টি জাহাজ, আমদানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন পণ্য এবং ৪ হাজারের বেশি গাড়ি।

এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ‘পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি’ স্থাপিত হয়েছে, যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। বন্দর ব্যবহার করে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের সাথে নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ আরও দ্রুততর এবং সহজ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে মোংলা বন্দর আন্তর্জাতিক মানের সেবার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।