প্রকৃত মানুষ গড়ার ভিত্তি: প্রাথমিক শিক্ষার ছয়-দর্শন – নাজমুল হক প্রদীপ

সংবাদ প্রতিদিনঃ ‎“আজকের শিশুকে আগামীদিনের সৎ, মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষায় কোন মূল্যবোধটিকে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চান?”

‎নাজমুল হক প্রদীপ (বি.এস.সি,এম.এস.সি(গণিত),প্রি-এম.এড,এম.এড(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এর চিন্তা-ভাবনা-

বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু পাঠ্য জ্ঞান দানের স্থান নয়, বরং একটি শিশুর চরিত্র, মূল্যবোধ, মানবিকতা এবং জীবনদর্শন গঠনের প্রথম পাঠশালা। আমাদের জাতীয় পাঠক্রমের মূল ছয়টি বিষয়—গণিত, বাংলা, বিজ্ঞান, ইংরেজি, ধর্ম এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়—একটি শিশুতে প্রকৃত অর্থেই “মানুষ হয়ে ওঠার” বীজ বপন করে। এ ছয় বিষয়ের সঠিক প্রয়োগ ও মানবিক উপস্থাপনই পারে একটি শিশুকে ভবিষ্যতের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।

১. গণিত: যুক্তিবোধ ও সৎ পথের শিক্ষা

গণিত শেখায় যুক্তি, শৃঙ্খলা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত অনুশীলন শিশুকে শিখিয়ে দেয়—জীবনেও সঠিক পথ, সঠিক হিসাব ও ন্যায়নীতি অনুসরণই সফলতার চাবিকাঠি।

‎২. বাংলা: ভাষার মাধ্যমে মানুষের অনুভূতি বোঝা

‎বাংলা সাহিত্য ও ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুর হৃদয়ে জন্ম নেয় সংবেদনশীলতা, মমতা এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার তাকে মানবিক আচরণে দক্ষ করে তোলে।

‎৩. বিজ্ঞান: কৌতূহল, সত্য ও যুক্তির চর্চা

‎বিজ্ঞান শেখায় পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা। ছোটবেলা থেকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠলে শিশু কুসংস্কারমুক্ত, বাস্তববাদী এবং উদ্ভাবনী চিন্তার মানুষ হয়ে ওঠে।

‎৪. ইংরেজি: বিশ্বভ্রমণের দরজা

‎ইংরেজি ভাষা শিশুর সামনে খুলে দেয় বৈশ্বিক জ্ঞানের ভাণ্ডার। এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সুযোগের জন্য প্রস্তুত করে।

‎৫. ধর্ম: নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা

‎ধর্ম শিক্ষা শিশুকে শেখায় সত্যবাদিতা, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলা ও পরোপকারের মূল্য। ধর্মীয় নৈতিকতা তাকে মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণতা দেয় এবং ভুল-ত্রুটির মধ্যেও আলোর পথ দেখায়।

‎৬. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: নাগরিকত্ব ও দায়িত্ববোধ

‎এই বিষয় শিশুকে পরিচয় করায় নিজের দেশ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব এবং বৈচিত্র্যময় বিশ্বের সঙ্গে। ফলে গড়ে ওঠে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা।

‎সংবাদ প্রতিদিনঃ এক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভূমিকা কী হতে পারে বলে মনে করেন?

১.‎শিশুকে ভালো মানুষ হওয়ার নৈতিক ভিত্তি শেখানো

২.‎সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সামাজিক আচরণের অনুশীলন করানো

৩.‎শিক্ষাকে আনন্দময় ও জীবনের সঙ্গে যুক্ত করা

৪.‎বইয়ের বাইরে বাস্তব ধারণা দিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা

৫.‎শৃঙ্খলা, সময়নিষ্ঠা ও পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে দেওয়া

৬.‎শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে মানবিক ও সহানুভূতিশীল করা

ছোটবেলা থেকেই যদি এই ছয়টি বিষয়ের আলোকে শিশুদের চিন্তা, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি সাজানো যায়—তাহলে তারা শুধু পরীক্ষায় নয়, জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

প্রকৃত মানুষ গড়ার ভিত্তি: প্রাথমিক শিক্ষার ছয়-দর্শন – নাজমুল হক প্রদীপ

নভেম্বর ২১, ২০২৫

সংবাদ প্রতিদিনঃ ‎“আজকের শিশুকে আগামীদিনের সৎ, মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষায় কোন মূল্যবোধটিকে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চান?”

‎নাজমুল হক প্রদীপ (বি.এস.সি,এম.এস.সি(গণিত),প্রি-এম.এড,এম.এড(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এর চিন্তা-ভাবনা-

বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু পাঠ্য জ্ঞান দানের স্থান নয়, বরং একটি শিশুর চরিত্র, মূল্যবোধ, মানবিকতা এবং জীবনদর্শন গঠনের প্রথম পাঠশালা। আমাদের জাতীয় পাঠক্রমের মূল ছয়টি বিষয়—গণিত, বাংলা, বিজ্ঞান, ইংরেজি, ধর্ম এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়—একটি শিশুতে প্রকৃত অর্থেই “মানুষ হয়ে ওঠার” বীজ বপন করে। এ ছয় বিষয়ের সঠিক প্রয়োগ ও মানবিক উপস্থাপনই পারে একটি শিশুকে ভবিষ্যতের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।

১. গণিত: যুক্তিবোধ ও সৎ পথের শিক্ষা

গণিত শেখায় যুক্তি, শৃঙ্খলা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত অনুশীলন শিশুকে শিখিয়ে দেয়—জীবনেও সঠিক পথ, সঠিক হিসাব ও ন্যায়নীতি অনুসরণই সফলতার চাবিকাঠি।

‎২. বাংলা: ভাষার মাধ্যমে মানুষের অনুভূতি বোঝা

‎বাংলা সাহিত্য ও ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুর হৃদয়ে জন্ম নেয় সংবেদনশীলতা, মমতা এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার তাকে মানবিক আচরণে দক্ষ করে তোলে।

‎৩. বিজ্ঞান: কৌতূহল, সত্য ও যুক্তির চর্চা

‎বিজ্ঞান শেখায় পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা। ছোটবেলা থেকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠলে শিশু কুসংস্কারমুক্ত, বাস্তববাদী এবং উদ্ভাবনী চিন্তার মানুষ হয়ে ওঠে।

‎৪. ইংরেজি: বিশ্বভ্রমণের দরজা

‎ইংরেজি ভাষা শিশুর সামনে খুলে দেয় বৈশ্বিক জ্ঞানের ভাণ্ডার। এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সুযোগের জন্য প্রস্তুত করে।

‎৫. ধর্ম: নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা

‎ধর্ম শিক্ষা শিশুকে শেখায় সত্যবাদিতা, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলা ও পরোপকারের মূল্য। ধর্মীয় নৈতিকতা তাকে মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণতা দেয় এবং ভুল-ত্রুটির মধ্যেও আলোর পথ দেখায়।

‎৬. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: নাগরিকত্ব ও দায়িত্ববোধ

‎এই বিষয় শিশুকে পরিচয় করায় নিজের দেশ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব এবং বৈচিত্র্যময় বিশ্বের সঙ্গে। ফলে গড়ে ওঠে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা।

‎সংবাদ প্রতিদিনঃ এক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভূমিকা কী হতে পারে বলে মনে করেন?

১.‎শিশুকে ভালো মানুষ হওয়ার নৈতিক ভিত্তি শেখানো

২.‎সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সামাজিক আচরণের অনুশীলন করানো

৩.‎শিক্ষাকে আনন্দময় ও জীবনের সঙ্গে যুক্ত করা

৪.‎বইয়ের বাইরে বাস্তব ধারণা দিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা

৫.‎শৃঙ্খলা, সময়নিষ্ঠা ও পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে দেওয়া

৬.‎শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে মানবিক ও সহানুভূতিশীল করা

ছোটবেলা থেকেই যদি এই ছয়টি বিষয়ের আলোকে শিশুদের চিন্তা, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি সাজানো যায়—তাহলে তারা শুধু পরীক্ষায় নয়, জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।