ছাতকের স্বাধীনতার মুহূর্ত: ৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আজ ৬ ডিসেম্বর ছাতক মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, রণকৌশল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অভিযানের মধ্য দিয়ে ছাতক শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান ও তীব্র যুদ্ধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে নোয়ারাই, ঝাওয়া ব্রিজ ও গোবিন্দগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নতুন অধ্যায় রচিত হয় ছাতকের মাটিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাতক সিমেন্ট কারখানা ও নোয়ারাই এলাকা ছিল পাক সেনাদের অন্যতম ঘাঁটি। নভেম্বরের শুরুর দিকে যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে নোয়ারাই অঞ্চলে তীব্র যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। কয়েকদিনব্যাপী সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাটি দখলে নিলেও কৌশলগত কারণে কিছু সময় পরে অবস্থান ছাড়তে হয় তাদের। এ যুদ্ধে স্থানীয়দের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব পড়ে এবং নোয়ারাই গ্রামের অন্তত ৩০ জন মানুষ হতাহত হন।

বাঁশতলা সেক্টর (৫ নম্বর সেক্টর) হেডকোয়ার্টারের পরিকল্পনায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ছাতক মুক্তির অভিযানে গতি আসে। ৫ ডিসেম্বর সুরমা নদীর উত্তরপাড় জয়নগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীর সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। ৬ ডিসেম্বর রাত এগারোটার দিকে কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই হানাদার বাহিনী ছাতক শহর ছেড়ে ঝাওয়া ব্রিজ এলাকায় সরে যায়। পরে তারা গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় অন্যান্য পিছু হটা বাহিনীর সাথে মিলিত হয়।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রার সমর্থনে ভারতীয় মিত্র বাহিনীও সুরমা নদীর তীরে অবস্থান নেয়। ছাতক সিমেন্ট কারখানা ও আশপাশের এলাকা মুক্ত হওয়ায় শহরটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ছাতকের প্রতিটি জনপদে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় বিজয়ের উল্লাসে।

ছাতক মুক্ত দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালী, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিনটি স্থানীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ছাতক মুক্ত দিবস শুধু একটি ঐতিহাসিক তারিখ নয়, এটি স্বাধীন বাংলাদেশে ছাতকের জনগণের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার প্রতীক।

ছাতকের স্বাধীনতার মুহূর্ত: ৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের গল্প

ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আজ ৬ ডিসেম্বর ছাতক মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, রণকৌশল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অভিযানের মধ্য দিয়ে ছাতক শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান ও তীব্র যুদ্ধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে নোয়ারাই, ঝাওয়া ব্রিজ ও গোবিন্দগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নতুন অধ্যায় রচিত হয় ছাতকের মাটিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাতক সিমেন্ট কারখানা ও নোয়ারাই এলাকা ছিল পাক সেনাদের অন্যতম ঘাঁটি। নভেম্বরের শুরুর দিকে যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে নোয়ারাই অঞ্চলে তীব্র যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। কয়েকদিনব্যাপী সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাটি দখলে নিলেও কৌশলগত কারণে কিছু সময় পরে অবস্থান ছাড়তে হয় তাদের। এ যুদ্ধে স্থানীয়দের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব পড়ে এবং নোয়ারাই গ্রামের অন্তত ৩০ জন মানুষ হতাহত হন।

বাঁশতলা সেক্টর (৫ নম্বর সেক্টর) হেডকোয়ার্টারের পরিকল্পনায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ছাতক মুক্তির অভিযানে গতি আসে। ৫ ডিসেম্বর সুরমা নদীর উত্তরপাড় জয়নগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীর সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। ৬ ডিসেম্বর রাত এগারোটার দিকে কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই হানাদার বাহিনী ছাতক শহর ছেড়ে ঝাওয়া ব্রিজ এলাকায় সরে যায়। পরে তারা গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় অন্যান্য পিছু হটা বাহিনীর সাথে মিলিত হয়।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রার সমর্থনে ভারতীয় মিত্র বাহিনীও সুরমা নদীর তীরে অবস্থান নেয়। ছাতক সিমেন্ট কারখানা ও আশপাশের এলাকা মুক্ত হওয়ায় শহরটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ছাতকের প্রতিটি জনপদে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় বিজয়ের উল্লাসে।

ছাতক মুক্ত দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালী, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিনটি স্থানীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ছাতক মুক্ত দিবস শুধু একটি ঐতিহাসিক তারিখ নয়, এটি স্বাধীন বাংলাদেশে ছাতকের জনগণের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার প্রতীক।