মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ভাঙনে বিলীনের পথে রোমজাইপুর গ্রাম

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালি ইউনিয়নের রোমজাইপুর গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক নৌপথ মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে, এতে ফসলি জমি ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রোমজাইপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে।

গ্রামটির চারপাশে নদী থাকায় এখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে। সুপেয় পানির তীব্র সংকট, আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে নিরাপত্তাহীন জীবন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। একমাত্র ইটের সড়কটিও বিভিন্ন স্থানে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বুধবার দুপুরে ভাঙনরোধ, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন এবং আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবিতে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় দাউদখালী নদীর তীরে। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও বাধন মানব উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ তামান্না ফেরদৌসি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ মোল্লা, জেলা জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান তুহিন, বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এএসএম মন্জুরুল হাসান মিলন, প্রজেক্ট ম্যানেজার সোহাগ হাওলাদার, একশনএইড বাংলাদেশের ইন্সপিরেটর নাহিদা ইসলাম তৃষাসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাঁচ শতাধিক মানুষ।

শুনানিতে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, নদীগর্ভে ইতোমধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। আরও অনেক বাড়ি ও জমি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে। তারা অবিলম্বে টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

রোমজাইপুর গ্রামের হেনা বেগম রিনা বলেন, “আমার বাড়ির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। বাথরুম ভেঙে পড়েছে, ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে—যেকোনো সময় পুরো ঘরটিই নদীতে চলে যেতে পারে।”

স্থানীয় বাসিন্দা হাশেম শেখ বলেন, “প্রতিদিনই পাড় ভাঙছে। ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব জানি না। টেকসই বাঁধ না হলে আমাদের গ্রাম একদিন পদ্মার ভাঙনের মতো হারিয়ে যাবে।”

রোজিনা বেগম বলেন, “নদী ভাঙনে আমাদের সব শেষ। ঘরের চারপাশে ফাটল ধরেছে। কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো পুরো গ্রাম নদীর গর্ভে চলে যাবে। আমরা দ্রুত টেকসই বাঁধ চাই।”

আরেক বাসিন্দা আবজাল আলী বলেন, “উপকূলীয় এই অঞ্চলে লবণাক্ত পানির সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট রয়েছে। দ্রুত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা জরুরি।”

তিনি আরও জানান, “ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই। সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরেই থাকতে হয়।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ মোল্লা বলেন, “পুকুর খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে পানির সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।”

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসি বলেন, “রোমজাইপুর গ্রাম রক্ষায় ছোট একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় প্রকল্প প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।”

মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ভাঙনে বিলীনের পথে রোমজাইপুর গ্রাম

অক্টোবর ২৯, ২০২৫

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালি ইউনিয়নের রোমজাইপুর গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক নৌপথ মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে, এতে ফসলি জমি ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রোমজাইপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে।

গ্রামটির চারপাশে নদী থাকায় এখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে। সুপেয় পানির তীব্র সংকট, আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে নিরাপত্তাহীন জীবন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। একমাত্র ইটের সড়কটিও বিভিন্ন স্থানে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বুধবার দুপুরে ভাঙনরোধ, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন এবং আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবিতে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় দাউদখালী নদীর তীরে। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও বাধন মানব উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ তামান্না ফেরদৌসি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ মোল্লা, জেলা জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান তুহিন, বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এএসএম মন্জুরুল হাসান মিলন, প্রজেক্ট ম্যানেজার সোহাগ হাওলাদার, একশনএইড বাংলাদেশের ইন্সপিরেটর নাহিদা ইসলাম তৃষাসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাঁচ শতাধিক মানুষ।

শুনানিতে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, নদীগর্ভে ইতোমধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। আরও অনেক বাড়ি ও জমি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে। তারা অবিলম্বে টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

রোমজাইপুর গ্রামের হেনা বেগম রিনা বলেন, “আমার বাড়ির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। বাথরুম ভেঙে পড়েছে, ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে—যেকোনো সময় পুরো ঘরটিই নদীতে চলে যেতে পারে।”

স্থানীয় বাসিন্দা হাশেম শেখ বলেন, “প্রতিদিনই পাড় ভাঙছে। ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব জানি না। টেকসই বাঁধ না হলে আমাদের গ্রাম একদিন পদ্মার ভাঙনের মতো হারিয়ে যাবে।”

রোজিনা বেগম বলেন, “নদী ভাঙনে আমাদের সব শেষ। ঘরের চারপাশে ফাটল ধরেছে। কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো পুরো গ্রাম নদীর গর্ভে চলে যাবে। আমরা দ্রুত টেকসই বাঁধ চাই।”

আরেক বাসিন্দা আবজাল আলী বলেন, “উপকূলীয় এই অঞ্চলে লবণাক্ত পানির সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট রয়েছে। দ্রুত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা জরুরি।”

তিনি আরও জানান, “ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই। সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরেই থাকতে হয়।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ মোল্লা বলেন, “পুকুর খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে পানির সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।”

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসি বলেন, “রোমজাইপুর গ্রাম রক্ষায় ছোট একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় প্রকল্প প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।”