মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহীঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনার অনুসন্ধান পুরো অঞ্চলের দুরবস্থার চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। কোটাভঙ্গ, অযোগ্য ব্যক্তিকে পদায়ন, নথি গোপন, রাজনৈতিক মদদ, আর্থিক সুবিধা, ‘চলতি দায়িত্ব’কে স্থায়ী পদে রূপান্তর এবং আরটিআই তথ্য এড়ানোর মতো ভয়াবহ অনিয়ম এখন এই অঞ্চলে নিয়মের পর্যায়ে পৌঁছেছে—এমন অভিযোগই উঠে এসেছে বিভিন্ন সূত্রের বক্তব্যে।
তপোময় বিশ্বাস নামের এক কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক অনুসন্ধান রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির মাত্রাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। অভিযোগ রয়েছে—কোটাভিত্তিক চারটি পদের বিপরীতে অযোগ্য হয়েও তিনি পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পেয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নথি গোপন, অস্পষ্ট নির্দেশ, দপ্তরগুলোর বিরোধী বক্তব্য, এবং আরটিআই আবেদন এড়ানোর কৌশল।
২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর রেলভবন থেকে জারি হওয়া এক আদেশে বলা হয়—তপোময় বিশ্বাসকে “চলতি দায়িত্বে” সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (ACOS) হিসেবে রাজশাহী দপ্তরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, চলতি দায়িত্ব স্থায়ী দায়িত্ব নয় এবং এই উল্লেখ সাইনবোর্ড ও পরিচয়ে বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাঁর অফিস সাইনবোর্ডে কোথাও “চ.দা.” উল্লেখ নেই; বরং স্থায়ী কর্মকর্তার মতোই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—চলতি দায়িত্ব সাধারণত ছয় মাসের বেশি দেওয়া যায় না; সেখানে তিন বছর ধরে একই পদে থাকা স্পষ্টতই নীতি লঙ্ঘন।
RTI আবেদন দাখিলের পর বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠে। আবেদনপত্রে স্পষ্টভাবে তার দায়িত্ব, গ্রেড, বিভাগীয় তথ্য ও নথি চাওয়া হলেও পশ্চিমাঞ্চল দপ্তর প্রথমবার “ভুল কোড” দেখিয়ে আবেদন গ্রহণ করেনি। আইন অনুযায়ী ভুল থাকলে ১০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে জানানো বাধ্যতামূলক হলেও তারা তা করেনি। দ্বিতীয়বার আবেদন করলে ২৭ দিন পর যে উত্তর দেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট কোনো নথি নেই; বরং বলা হয়—পদোন্নতি হলে তার সুপারিশ ও নথি ঢাকার মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকেই আসে, আর সেগুলো পশ্চিমাঞ্চলে নাকি পাঠানো হয়নি।
অন্যদিকে পার্বতীপুর ও রাজশাহীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন—তপোময় বিশ্বাসকে মূলত প্রমোশন দিয়েই রাজশাহীতে যোগদান করানো হয়েছে, এবং তিনি কার্যত ৯ম গ্রেডে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ দপ্তরের বক্তব্য ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী।
কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশের অনিচ্ছায় জানিয়েছেন—মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে তাঁকে তিন বছর ধরে একই পদে রাখা হয়েছে। স্টোরস বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলা অপচয় ও অনিয়মের সুবিধা ভোগে তিনি অন্যতম ব্যক্তি বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরটিআই আবেদন জমা দেওয়ার পর উচ্চপদস্থ কয়েকজন নাকি বৈঠক ডেকে কীভাবে তথ্য না দেওয়া যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেন বলে সূত্র জানায়।
দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি মহাপরিচালকের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বক্তব্য—দায়িত্ব দিয়েছেন মহাপরিচালক; বিস্তারিত জানেন তিনিই। কিন্তু রাজশাহীর জেলা প্রশাসন, দুদক ও রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের মতে—মহাপরিচালক দীর্ঘদিন ধরে সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং তার অজান্তে কোনো অনিয়ম ঘটতে পারে; তবে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে দায়ী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নিয়োগ–পদোন্নতি বাণিজ্যের বিষয়টি নতুন নয়। টেন্ডার সিন্ডিকেট, ঠিকাদার যোগসাজশ, ভুয়া সনদে চাকরি পাওয়া, হাজিরা খাতায় অনিয়ম, মামলার আসামিদের অর্থের বিনিময়ে বদলি, রাজনৈতিক পরিচয়ে কাজ আদায়—এসব বহুদিন ধরেই চলছে। দুদক নানা সময়ে অভিযানে অনিয়ম পেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি; বরং আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নথি গোপন, দায়িত্বের অসঙ্গতি, আরটিআই তথ্য এড়ানো, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা আড়াল করা এবং দায় চাপানোর প্রবণতা রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রশাসনিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে অস্বচ্ছ করে তুলেছে। বিষয়টির সৎ অনুসন্ধান ছাড়া সত্য উন্মোচন সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে সম্পর্কিত বিভাগে আপিল ও ডাকযোগে আবেদন করা হয়েছে। সেই নথি হাতে আসলেই অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্ব প্রকাশ করা হবে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নিয়োগ–পদোন্নতি বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহীঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনার অনুসন্ধান পুরো অঞ্চলের দুরবস্থার চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। কোটাভঙ্গ, অযোগ্য ব্যক্তিকে পদায়ন, নথি গোপন, রাজনৈতিক মদদ, আর্থিক সুবিধা, ‘চলতি দায়িত্ব’কে স্থায়ী পদে রূপান্তর এবং আরটিআই তথ্য এড়ানোর মতো ভয়াবহ অনিয়ম এখন এই অঞ্চলে নিয়মের পর্যায়ে পৌঁছেছে—এমন অভিযোগই উঠে এসেছে বিভিন্ন সূত্রের বক্তব্যে।
তপোময় বিশ্বাস নামের এক কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক অনুসন্ধান রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির মাত্রাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। অভিযোগ রয়েছে—কোটাভিত্তিক চারটি পদের বিপরীতে অযোগ্য হয়েও তিনি পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পেয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নথি গোপন, অস্পষ্ট নির্দেশ, দপ্তরগুলোর বিরোধী বক্তব্য, এবং আরটিআই আবেদন এড়ানোর কৌশল।
২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর রেলভবন থেকে জারি হওয়া এক আদেশে বলা হয়—তপোময় বিশ্বাসকে “চলতি দায়িত্বে” সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (ACOS) হিসেবে রাজশাহী দপ্তরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, চলতি দায়িত্ব স্থায়ী দায়িত্ব নয় এবং এই উল্লেখ সাইনবোর্ড ও পরিচয়ে বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাঁর অফিস সাইনবোর্ডে কোথাও “চ.দা.” উল্লেখ নেই; বরং স্থায়ী কর্মকর্তার মতোই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—চলতি দায়িত্ব সাধারণত ছয় মাসের বেশি দেওয়া যায় না; সেখানে তিন বছর ধরে একই পদে থাকা স্পষ্টতই নীতি লঙ্ঘন।
RTI আবেদন দাখিলের পর বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠে। আবেদনপত্রে স্পষ্টভাবে তার দায়িত্ব, গ্রেড, বিভাগীয় তথ্য ও নথি চাওয়া হলেও পশ্চিমাঞ্চল দপ্তর প্রথমবার “ভুল কোড” দেখিয়ে আবেদন গ্রহণ করেনি। আইন অনুযায়ী ভুল থাকলে ১০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে জানানো বাধ্যতামূলক হলেও তারা তা করেনি। দ্বিতীয়বার আবেদন করলে ২৭ দিন পর যে উত্তর দেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট কোনো নথি নেই; বরং বলা হয়—পদোন্নতি হলে তার সুপারিশ ও নথি ঢাকার মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকেই আসে, আর সেগুলো পশ্চিমাঞ্চলে নাকি পাঠানো হয়নি।
অন্যদিকে পার্বতীপুর ও রাজশাহীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন—তপোময় বিশ্বাসকে মূলত প্রমোশন দিয়েই রাজশাহীতে যোগদান করানো হয়েছে, এবং তিনি কার্যত ৯ম গ্রেডে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ দপ্তরের বক্তব্য ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী।
কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশের অনিচ্ছায় জানিয়েছেন—মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে তাঁকে তিন বছর ধরে একই পদে রাখা হয়েছে। স্টোরস বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলা অপচয় ও অনিয়মের সুবিধা ভোগে তিনি অন্যতম ব্যক্তি বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরটিআই আবেদন জমা দেওয়ার পর উচ্চপদস্থ কয়েকজন নাকি বৈঠক ডেকে কীভাবে তথ্য না দেওয়া যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেন বলে সূত্র জানায়।
দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি মহাপরিচালকের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বক্তব্য—দায়িত্ব দিয়েছেন মহাপরিচালক; বিস্তারিত জানেন তিনিই। কিন্তু রাজশাহীর জেলা প্রশাসন, দুদক ও রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের মতে—মহাপরিচালক দীর্ঘদিন ধরে সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং তার অজান্তে কোনো অনিয়ম ঘটতে পারে; তবে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে দায়ী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নিয়োগ–পদোন্নতি বাণিজ্যের বিষয়টি নতুন নয়। টেন্ডার সিন্ডিকেট, ঠিকাদার যোগসাজশ, ভুয়া সনদে চাকরি পাওয়া, হাজিরা খাতায় অনিয়ম, মামলার আসামিদের অর্থের বিনিময়ে বদলি, রাজনৈতিক পরিচয়ে কাজ আদায়—এসব বহুদিন ধরেই চলছে। দুদক নানা সময়ে অভিযানে অনিয়ম পেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি; বরং আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নথি গোপন, দায়িত্বের অসঙ্গতি, আরটিআই তথ্য এড়ানো, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা আড়াল করা এবং দায় চাপানোর প্রবণতা রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রশাসনিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে অস্বচ্ছ করে তুলেছে। বিষয়টির সৎ অনুসন্ধান ছাড়া সত্য উন্মোচন সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে সম্পর্কিত বিভাগে আপিল ও ডাকযোগে আবেদন করা হয়েছে। সেই নথি হাতে আসলেই অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্ব প্রকাশ করা হবে।