নোতো উপদ্বীপে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত ২২২, ইশিকাওয়ায় জরুরি অবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

৮ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১:১৫ নাগাদ জাপানের মধ্যাঞ্চলীয় নোতো উপদ্বীপের কাছে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ইশিকাওয়া প্রদেশে কমপক্ষে ২২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং জরুরি অবস্থার ঘোষণা সহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।


জাপানের আবহাওয়া সংস্থা ভূমিকম্পটিকে শিন্দো-৭ মাত্রায় রেকর্ড করেছে। এটি ২০১৮ সালের পর দেশের প্রথম শিন্দো-৭ মাত্রার ভূমিকম্প। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল সুজু শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে এবং ভূগর্ভের গভীরতা ছিল ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার। মূল ভূমিকম্পের চার মিনিট আগে ৫.৮ এবং নয় মিনিট পরে ৬.২ মাত্রার দুটি আফটারশক অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ওয়াজিমা বন্দরে ১ দশমিক ২ মিটার উচ্চ ঢেউ আঘাত হানে। নিইগাতা, তোয়ামা ও হিয়োগো প্রদেশের উপকূলে সুনামির ঢেউ দেখা যায়। প্রথমে পাঁচ মিটার পর্যন্ত ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হলেও পরে তা কমে আসে। দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলেও ছোট ঢেউ পৌঁছেছে।

ইশিকাওয়া প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুজু শহরে ৯৯ এবং ওয়াজিমা শহরে ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ওয়াজিমা শহরে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক বাড়ি পুড়ে গেছে। ভূমিধসের কারণে বহু সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে, যা উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় এক লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাতেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। জাপানের স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাজারো সদস্য তুষারপাত ও শীতের মধ্যে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়া মানুষ উদ্ধারের জন্য দ্রুত অনুসন্ধান চলছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি শিকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো বড় ক্ষতি হয়নি। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭.৪ থেকে ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে।

শুধু বাড়িঘর নয়, স্কুল, হাসপাতাল, অফিস, সেতু এবং যোগাযোগের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধস ও বন্ধ সড়কের কারণে জরুরি পরিষেবা, মেডিকেল সাপোর্ট এবং খাবার বিতরণে বাধা দেখা দিয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা রাত-দিন উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ধ্বংসস্তূপ সরানো ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।

জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ “রিং অব ফায়ার” অঞ্চলে অবস্থিত। চলতি বছরে এটিই দেশের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন এবং অবকাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

দূর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, স্বেচ্ছাসেবী দল এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা কাজ করছে। বিদ্যুৎ–পানি–গ্যাস সংযোগ পুনরায় স্থাপন এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। প্রশাসন এবং উদ্ধারকারীরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাজার এবং দোকানগুলোও ধ্বংসপ্রাপ্ত। খাদ্য, পানি ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।

ভূমিকম্পের পর জনজীবনে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মানুষ রাতের অন্ধকারে এবং শীতের মধ্যে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। প্রশাসন সতর্ক করেছে, আরও আফটারশকের সম্ভাবনা রয়েছে।

নোতো উপদ্বীপে এই ভূমিকম্প জাপানের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। সরকার জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার, নিরাপদ আশ্রয় এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরই পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।


নোতো উপদ্বীপে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত ২২২, ইশিকাওয়ায় জরুরি অবস্থা

ডিসেম্বর ৮, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

৮ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১:১৫ নাগাদ জাপানের মধ্যাঞ্চলীয় নোতো উপদ্বীপের কাছে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ইশিকাওয়া প্রদেশে কমপক্ষে ২২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং জরুরি অবস্থার ঘোষণা সহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।


জাপানের আবহাওয়া সংস্থা ভূমিকম্পটিকে শিন্দো-৭ মাত্রায় রেকর্ড করেছে। এটি ২০১৮ সালের পর দেশের প্রথম শিন্দো-৭ মাত্রার ভূমিকম্প। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল সুজু শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে এবং ভূগর্ভের গভীরতা ছিল ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার। মূল ভূমিকম্পের চার মিনিট আগে ৫.৮ এবং নয় মিনিট পরে ৬.২ মাত্রার দুটি আফটারশক অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ওয়াজিমা বন্দরে ১ দশমিক ২ মিটার উচ্চ ঢেউ আঘাত হানে। নিইগাতা, তোয়ামা ও হিয়োগো প্রদেশের উপকূলে সুনামির ঢেউ দেখা যায়। প্রথমে পাঁচ মিটার পর্যন্ত ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হলেও পরে তা কমে আসে। দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলেও ছোট ঢেউ পৌঁছেছে।

ইশিকাওয়া প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুজু শহরে ৯৯ এবং ওয়াজিমা শহরে ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ওয়াজিমা শহরে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক বাড়ি পুড়ে গেছে। ভূমিধসের কারণে বহু সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে, যা উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় এক লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাতেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। জাপানের স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাজারো সদস্য তুষারপাত ও শীতের মধ্যে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়া মানুষ উদ্ধারের জন্য দ্রুত অনুসন্ধান চলছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি শিকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো বড় ক্ষতি হয়নি। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭.৪ থেকে ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে।

শুধু বাড়িঘর নয়, স্কুল, হাসপাতাল, অফিস, সেতু এবং যোগাযোগের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধস ও বন্ধ সড়কের কারণে জরুরি পরিষেবা, মেডিকেল সাপোর্ট এবং খাবার বিতরণে বাধা দেখা দিয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা রাত-দিন উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ধ্বংসস্তূপ সরানো ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।

জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ “রিং অব ফায়ার” অঞ্চলে অবস্থিত। চলতি বছরে এটিই দেশের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন এবং অবকাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

দূর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, স্বেচ্ছাসেবী দল এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা কাজ করছে। বিদ্যুৎ–পানি–গ্যাস সংযোগ পুনরায় স্থাপন এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। প্রশাসন এবং উদ্ধারকারীরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাজার এবং দোকানগুলোও ধ্বংসপ্রাপ্ত। খাদ্য, পানি ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।

ভূমিকম্পের পর জনজীবনে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মানুষ রাতের অন্ধকারে এবং শীতের মধ্যে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। প্রশাসন সতর্ক করেছে, আরও আফটারশকের সম্ভাবনা রয়েছে।

নোতো উপদ্বীপে এই ভূমিকম্প জাপানের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। সরকার জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার, নিরাপদ আশ্রয় এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরই পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।