মুন্সিগঞ্জে আড়িয়াল বিলের সংযোগ খাল-নদী ভরাটে পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়

মাহমুদুল হাসান, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার আড়িয়াল বিলের সঙ্গে সংযুক্ত অধিকাংশ খাল ও নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। শুকনো মৌসুম শুরু না হতেই এসব খাল পানিশূন্য হয়ে পড়ে; অন্যদিকে বর্ষাকালে কচুরীপানায় ভরে যাওয়ায় নৌযান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আড়িয়াল বিলের আশপাশের বেশ কিছু ছোট-বড় ব্রীজ ও কালভার্টের নিচে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষাকালে পানি বেড়ে ব্রীজ ছুঁয়ে যায়, আর শুকনো মৌসুমে খাল শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে। এতে পানি স্থবির হয়ে পচে গিয়ে রোগ-বালাই সৃষ্টি করছে। কৃষকেরা জানান, একসময় এসব খালই ছিল তাদের চলাচল ও সেচের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু এখন সেই খালগুলো পরিণত হয়েছে পচা পানির আধারে।

আড়িয়াল বিল অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্যুৎচালিত ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে সেচের পানি তুলতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ব্যয়বহুল। অথচ সঠিক পরিকল্পনায় খাল ও নদীগুলোর পানি সংরক্ষণ করা গেলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। পানি সংকটে বর্তমানে অনেক জমিই অনাবাদি পড়ে আছে।

স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি (পাবসস) ও জাইকার অর্থায়নে গত শুকনো মৌসুমে আলমপুর দক্ষিণহাটি থেকে মদনখালী পর্যন্ত একটি খাল আংশিক খনন করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটি সঠিকভাবে খনন না হওয়ায় এর ব্যবহারযোগ্যতা কমে গেছে। ওই খালটি মদনখালী ইটভাটা এলাকা থেকে চুড়াইন বাজার হয়ে খাহ্রা কলেজ পর্যন্ত গিয়ে বেনুখালী অংশে শিবরামপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, আলমপুর দক্ষিণহাটি থেকে শেখরনগর, চিত্রকোট, কালিপুর হয়ে ইছামতী নদীর শাখা ধলেশ্বরীতে গিয়ে মিশেছে।

এ ছাড়া আলমপুর তালতলা থেকে আরেকটি শাখা দক্ষিণমুখী হয়ে ষোলঘর শ্রীনগর বাজার হয়ে পদ্মা নদীতে গিয়ে মিলেছে। তবে এসব খাল ও নদী দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষায় কিছুটা পানি জমলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

আড়িয়াল বিল বাংলাদেশের অন্যতম একটি খাদ্যশস্য ভান্ডার। কিন্তু সুপরিকল্পিত খাল-নদী সংস্কার না হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে শাখা নদীগুলো। খাল ও নদীগুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃখনন না হলে কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থাকবেন।

এছাড়া গ্রামীণ খালগুলো ভয়াবহ দূষণের শিকার। বর্জ্য, পশু-পাখির মল-মূত্র ও বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ জমে খালগুলো নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের মতে, খাল খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না করলে এই দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে না।

বাড়ৈখালী বাজার অংশে আড়িয়াল বিলের বড় খালের একটি শাখা কয়েক বছর আগে নামমাত্র খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে তাতে অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও তা সম্পূর্ণ দূষিত। বাড়ৈখালী বাজার থেকে শিবরামপুর ও শেখরনগর হয়ে সিংগাডাক মুখী ইছামতী নদীটিও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। নদীর দুই তীরের জমি স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। ফলে নদীটি এখন বর্ষায়ও ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা জানান, দ্রুত খাল-নদীগুলোর খনন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করা হলে আড়িয়াল বিলের কৃষিনির্ভর হাজারো পরিবার চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা সরকারের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

মুন্সিগঞ্জে আড়িয়াল বিলের সংযোগ খাল-নদী ভরাটে পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়

অক্টোবর ২৬, ২০২৫

মাহমুদুল হাসান, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার আড়িয়াল বিলের সঙ্গে সংযুক্ত অধিকাংশ খাল ও নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। শুকনো মৌসুম শুরু না হতেই এসব খাল পানিশূন্য হয়ে পড়ে; অন্যদিকে বর্ষাকালে কচুরীপানায় ভরে যাওয়ায় নৌযান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আড়িয়াল বিলের আশপাশের বেশ কিছু ছোট-বড় ব্রীজ ও কালভার্টের নিচে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষাকালে পানি বেড়ে ব্রীজ ছুঁয়ে যায়, আর শুকনো মৌসুমে খাল শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে। এতে পানি স্থবির হয়ে পচে গিয়ে রোগ-বালাই সৃষ্টি করছে। কৃষকেরা জানান, একসময় এসব খালই ছিল তাদের চলাচল ও সেচের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু এখন সেই খালগুলো পরিণত হয়েছে পচা পানির আধারে।

আড়িয়াল বিল অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্যুৎচালিত ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে সেচের পানি তুলতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ব্যয়বহুল। অথচ সঠিক পরিকল্পনায় খাল ও নদীগুলোর পানি সংরক্ষণ করা গেলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। পানি সংকটে বর্তমানে অনেক জমিই অনাবাদি পড়ে আছে।

স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি (পাবসস) ও জাইকার অর্থায়নে গত শুকনো মৌসুমে আলমপুর দক্ষিণহাটি থেকে মদনখালী পর্যন্ত একটি খাল আংশিক খনন করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটি সঠিকভাবে খনন না হওয়ায় এর ব্যবহারযোগ্যতা কমে গেছে। ওই খালটি মদনখালী ইটভাটা এলাকা থেকে চুড়াইন বাজার হয়ে খাহ্রা কলেজ পর্যন্ত গিয়ে বেনুখালী অংশে শিবরামপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, আলমপুর দক্ষিণহাটি থেকে শেখরনগর, চিত্রকোট, কালিপুর হয়ে ইছামতী নদীর শাখা ধলেশ্বরীতে গিয়ে মিশেছে।

এ ছাড়া আলমপুর তালতলা থেকে আরেকটি শাখা দক্ষিণমুখী হয়ে ষোলঘর শ্রীনগর বাজার হয়ে পদ্মা নদীতে গিয়ে মিলেছে। তবে এসব খাল ও নদী দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষায় কিছুটা পানি জমলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

আড়িয়াল বিল বাংলাদেশের অন্যতম একটি খাদ্যশস্য ভান্ডার। কিন্তু সুপরিকল্পিত খাল-নদী সংস্কার না হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে শাখা নদীগুলো। খাল ও নদীগুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃখনন না হলে কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থাকবেন।

এছাড়া গ্রামীণ খালগুলো ভয়াবহ দূষণের শিকার। বর্জ্য, পশু-পাখির মল-মূত্র ও বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ জমে খালগুলো নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের মতে, খাল খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না করলে এই দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে না।

বাড়ৈখালী বাজার অংশে আড়িয়াল বিলের বড় খালের একটি শাখা কয়েক বছর আগে নামমাত্র খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে তাতে অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও তা সম্পূর্ণ দূষিত। বাড়ৈখালী বাজার থেকে শিবরামপুর ও শেখরনগর হয়ে সিংগাডাক মুখী ইছামতী নদীটিও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। নদীর দুই তীরের জমি স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। ফলে নদীটি এখন বর্ষায়ও ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা জানান, দ্রুত খাল-নদীগুলোর খনন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করা হলে আড়িয়াল বিলের কৃষিনির্ভর হাজারো পরিবার চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা সরকারের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেছেন।