নওগাঁয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ: পরিচালক তনু অবশেষে সিআইডির হাতে

মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

নওগাঁয় বহুল আলোচিত বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিশাল আর্থিক প্রতারণা চক্রের মূলহোতা ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নাজিম উদ্দিন তনু অবশেষে সিআইডির হাতে ধরা পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় একাধিক মামলা দায়ের রয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফাউন্ডেশনটি উচ্চ লভ্যাংশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক বছর ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। সঞ্চয়, ডিপিএস এবং এককালীন আমানতের নামে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে সামান্য অংশ পরিশোধ করলেও ২০২৪ সালের আগস্টের পর লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে লভ্যাংশ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে গ্রাহকরা অফিসে গেলে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং বেশিরভাগ সময়ই অফিস বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি ইতোমধ্যে ৮০০–র বেশি গ্রাহকের অভিযোগ যাচাই করে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে, যা তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী তানজিলা আক্তার মুক্তা প্রায় ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা দাবি করে ৪০ থেকে ৫০ জন ভুক্তভোগীর পক্ষ নিয়ে মামলা করেন। অন্যদিকে মাহিমা বানু লাকি নিজের ২০ লাখসহ দুই থেকে তিন শ’ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের দাবি তুলে পৃথক মামলার মাধ্যমে অভিযোগ করেন। প্রতারণা চক্রের সদস্য হিসেবে মামুনুর রশিদ মামুনসহ ছয়জনকে আগেই গ্রেফতার করা হলেও মূল পরিকল্পনাকারী তনু পলাতক ছিলেন। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করায় তদন্তে নতুন অগ্রগতি এসেছে।

আরোও পড়ুন – রন্ধনশিল্পী জাহিদাকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় রন্ধনশিল্প অঙ্গন

সিআইডি জানায়, অর্থ আত্মসাৎ করে চক্রটি বিভিন্ন স্থানে সম্পদ গড়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিগুলো সনাক্তের পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ জব্দ ও গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে। তদন্ত সংস্থা আরও জানায়, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্তে কাজ করছেন তারা এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওগাঁ ও আশপাশের জেলায় এই ঘটনার প্রভাব ব্যাপক। বহু পরিবার সঞ্চয়ের শেষ ভরসা হারিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘ তদন্তের পর তনুর গ্রেফতার গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেও মূল টাকার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ কমছে না। স্থানীয়রা মনে করছেন, কঠোর নজরদারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে এ ধরনের ঘটনা থামানো কঠিন হয়ে পড়বে।

নওগাঁয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ: পরিচালক তনু অবশেষে সিআইডির হাতে

নভেম্বর ১৯, ২০২৫

মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

নওগাঁয় বহুল আলোচিত বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিশাল আর্থিক প্রতারণা চক্রের মূলহোতা ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নাজিম উদ্দিন তনু অবশেষে সিআইডির হাতে ধরা পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় একাধিক মামলা দায়ের রয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফাউন্ডেশনটি উচ্চ লভ্যাংশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক বছর ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। সঞ্চয়, ডিপিএস এবং এককালীন আমানতের নামে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে সামান্য অংশ পরিশোধ করলেও ২০২৪ সালের আগস্টের পর লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে লভ্যাংশ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে গ্রাহকরা অফিসে গেলে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং বেশিরভাগ সময়ই অফিস বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি ইতোমধ্যে ৮০০–র বেশি গ্রাহকের অভিযোগ যাচাই করে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে, যা তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী তানজিলা আক্তার মুক্তা প্রায় ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা দাবি করে ৪০ থেকে ৫০ জন ভুক্তভোগীর পক্ষ নিয়ে মামলা করেন। অন্যদিকে মাহিমা বানু লাকি নিজের ২০ লাখসহ দুই থেকে তিন শ’ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের দাবি তুলে পৃথক মামলার মাধ্যমে অভিযোগ করেন। প্রতারণা চক্রের সদস্য হিসেবে মামুনুর রশিদ মামুনসহ ছয়জনকে আগেই গ্রেফতার করা হলেও মূল পরিকল্পনাকারী তনু পলাতক ছিলেন। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করায় তদন্তে নতুন অগ্রগতি এসেছে।

আরোও পড়ুন – রন্ধনশিল্পী জাহিদাকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় রন্ধনশিল্প অঙ্গন

সিআইডি জানায়, অর্থ আত্মসাৎ করে চক্রটি বিভিন্ন স্থানে সম্পদ গড়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিগুলো সনাক্তের পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ জব্দ ও গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে। তদন্ত সংস্থা আরও জানায়, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্তে কাজ করছেন তারা এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওগাঁ ও আশপাশের জেলায় এই ঘটনার প্রভাব ব্যাপক। বহু পরিবার সঞ্চয়ের শেষ ভরসা হারিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘ তদন্তের পর তনুর গ্রেফতার গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেও মূল টাকার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ কমছে না। স্থানীয়রা মনে করছেন, কঠোর নজরদারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে এ ধরনের ঘটনা থামানো কঠিন হয়ে পড়বে।