লাখাইয়ের সুতাং নদী এখন মৃত্যুফাঁদ: বর্জ্য দূষণে শত গ্রামের জীবন বিপর্যস্ত

সেলিম মাহবুবঃ

লাখাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুতাং নদী আজ মারাত্মক দূষণের দায় বহন করছে। শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা অসংখ্য কারখানা দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলায় একসময়ের প্রবহমান এই নদী এখন কালো কাদাজলে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নেই, আর যেগুলো রয়েছে সেগুলোও নিয়মিত চালানো হয় না। ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে জলজ প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে, কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম সংকটে পড়েছে।

সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লাখাই হয়ে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মোট ৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি একসময় কৃষি, মৎস্য ও নৌগত চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু বহু বছর ধরে ড্রেজিং না হওয়া, উজান থেকে আসা পলি এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য জমে নাব্যতা হারিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীতে এখন শুধু কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবাহিত হয়।

অলিপুর শিল্প এলাকায় প্রাণ (আরএফএল) ও স্কয়ার গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নদীতে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্ষা শেষে পানির স্তর কমতেই নদীর মূল রং প্রকাশ পায়—কালো, ঘন এবং তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত। সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। নদীর মাছ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি চাষাবাদেও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসল নষ্ট হচ্ছে।

এলাকার নুরপুর, রাজিউড়া, ফান্দ্রাইল, উচাইল, বুল্লা, করাবসহ বহু গ্রামের মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করতে গিয়ে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন—পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম অত্যন্ত দুর্বল। তারা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি স্থাপন ও নিয়মিত পরিচালনার বিষয়টিতে কার্যকর নজরদারি করছেন না।

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা জানান, বহুবার আন্দোলন, প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করা হলেও শিল্পপতিদের প্রভাবের কারণে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া সুতাং নদীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন। দ্রুত ড্রেজিং, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ইটিপি বাধ্যতামূলক চালু এবং বিকল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ না করলে নদীটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লাখাইয়ের সুতাং নদী এখন মৃত্যুফাঁদ: বর্জ্য দূষণে শত গ্রামের জীবন বিপর্যস্ত

নভেম্বর ২৪, ২০২৫

সেলিম মাহবুবঃ

লাখাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুতাং নদী আজ মারাত্মক দূষণের দায় বহন করছে। শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা অসংখ্য কারখানা দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলায় একসময়ের প্রবহমান এই নদী এখন কালো কাদাজলে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নেই, আর যেগুলো রয়েছে সেগুলোও নিয়মিত চালানো হয় না। ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে জলজ প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে, কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম সংকটে পড়েছে।

সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লাখাই হয়ে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মোট ৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি একসময় কৃষি, মৎস্য ও নৌগত চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু বহু বছর ধরে ড্রেজিং না হওয়া, উজান থেকে আসা পলি এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য জমে নাব্যতা হারিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীতে এখন শুধু কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবাহিত হয়।

অলিপুর শিল্প এলাকায় প্রাণ (আরএফএল) ও স্কয়ার গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নদীতে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্ষা শেষে পানির স্তর কমতেই নদীর মূল রং প্রকাশ পায়—কালো, ঘন এবং তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত। সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। নদীর মাছ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি চাষাবাদেও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসল নষ্ট হচ্ছে।

এলাকার নুরপুর, রাজিউড়া, ফান্দ্রাইল, উচাইল, বুল্লা, করাবসহ বহু গ্রামের মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করতে গিয়ে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন—পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম অত্যন্ত দুর্বল। তারা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি স্থাপন ও নিয়মিত পরিচালনার বিষয়টিতে কার্যকর নজরদারি করছেন না।

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা জানান, বহুবার আন্দোলন, প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করা হলেও শিল্পপতিদের প্রভাবের কারণে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া সুতাং নদীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন। দ্রুত ড্রেজিং, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ইটিপি বাধ্যতামূলক চালু এবং বিকল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ না করলে নদীটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।